এই ব্লগটি সন্ধান করুন

Mozammel Hoque Momin

Mozammel Hoque Momin

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

পদ্মা সেতুর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন



পদ্মা সেতুর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন 


পদ্মা সেতু 

লং স্পান ব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল প্রাকৃতিক শক্তিসাম্প্রতিক বিপর্যয় গুলো পর্যবেক্ষণ করে এই বাস্তবতায় উপনীত হওয়া যায় যে প্রকৃতি অবকাঠামোতে ধ্বংসাত্মক হতে পারে। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে এর ডিজাইন টিম কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এই সময়ের সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন সমাধান ব্যবহার করেছে।

( ডিজাইন টিমঃ  পদ্মা মাল্টিপারপাস ব্রিজের ডিটেইল ডিজাইন টিমের মধ্যে আন্তর্জাতিক ও দেশি অনেক পরামর্শকারি নিযুক্ত ছিলেন যাদের মধ্যে প্রধান ছিল AECON . এছাড়াও টিমের অন্যন্য দের মধ্যে  SMEC International, Northwest Hydraulic Consultants and ACE Consultants, with additional assistance from Aas-Jakobsen and HR Wallingford ছিলেন . AECON যা AECON Technology Corporation নামে পরিচিত আমেরিকার একটি মাল্টিনেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্রাম যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে ডিজাইন, পরামর্শ, নির্মাণ এবং পরিচালনা সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান ই পদ্মা সেতুর ডিজাইন করেছে।)

৬.১৫ কিলোমিটার(৩.৮ মাইল ) দৈর্ঘ্যের এ পদ্মা সেতু একটি ল্যান্ডমার্ক স্ট্রাকচার এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী ক্রসিং গুলোর মধ্যে অন্যতম। পদ্মা নদী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নদী এবং এই নদী দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমানে পলি পরিবাহিত হয়।

বর্ষার মৌসুমে পদ্মা নদীতে দ্রুত পানি প্রবাহিত হয় এবং নদী গর্ভে গভীর ক্ষয়ের সৃষ্টি হয় ফলে সেতুর স্থায়িত্তের জন্য গভীর পাইল ফাউন্ডেশনের প্রয়োজন পড়ে। পদ্মা সেতু সাইটটি ভয়াবহ সিসমিক কার্যকলাপের এলাকাতে রয়েছে ফলে সেতুতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকম্প জনিত বল কাজ করবে। এই প্রজেক্টে এই সংমিশ্রণ , প্রকৃতির অন্যন্য শক্তির সাথে মিশে এক অনন্য চ্যালেঞ্জ প্রকাশ করেছিল।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্পের সম্পূর্ণ ডিজাইন সফলতার সাথে শেষ করেছে  AECOM AECOM বিকল্প কংক্রিট ডেকফর্ম উন্নততর করেছে যা অধিক শক্তিশালী কংক্রিট ট্রাস  ব্রীজ । এর মধ্যে রয়েছে একটি কংক্রিট গার্ডার ব্রীজ ও একটি স্টিল ট্রাস ব্রীজ। সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধা পাওয়া জন্য এক স্তরের চাইতে দ্বিস্তর ব্রীজ নির্বাচন করা হয়েছিল। উন্নত নিরাপত্তা, উন্নত অপারেশন, পরিদর্শন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং জরুরী ত্রাণ প্রক্রিয়াগুলি এবং ইউটিলিটিগুলির কার্যকরী প্রসারের জন্য এটিতে পৃথক পৃথক হাইওয়ে লেন এবং রেলওয়ে লাইন  অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল রেলপথের ডেক নিচে রাখার কারনে রেলপথের নীচের কাঠামোগত গভীরতা হ্রাস পায়, যার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ব্যাংকগুলিকে টাইম-ইন করার জন্য রেলওয়ে পদ্ধতির পথের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়েছিল দুই স্তরের কাঠামো নির্মাণ করে কাঠামোর খরচ কমিয়ে কাঠামোকে আরও কার্যকর করা হয়েছিল।
প্রত্যেকটি ব্রীজ ফর্মের জন্য এনালাইটিকাল মডেল বিকাশিত করা হয়েছিল সেতুর মেম্বারের সাইজ নির্ণয় করার জন্য বিশেষ করে সেতুর ওজন কমানোর জন্য। ইস্পাত ট্রাস সেতুটি হালকা ডেকের সাথে সবচেয়ে কার্যকরী ছিল। সর্বোত্তম স্প্যান দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করার জন্য এই বিস্তর ভাবে গবেষণা করা হয়েছিল। এই গবেষণায় ডেক ওজন ও ভিত্তি লোড এর ক্ষেত্রে ১২০ মি, ১৫০মি , ১৮০মি এর দৈর্ঘ্যের সাথে তুলনা করা হয়েছিল । এই তথ্য থেকে ১৫০মি স্পান এর জন্য একটি নির্মাণ ব্যয় অনুমান করা হয়। অর্থাৎ সেতুটির জন্য সবচেয়ে অর্থনৈতিক ও উপযুক্ত ফর্ম ইস্পাত ট্রাস সেতু পাওয়া গিয়েছিল যা কংক্রিট স্ল্যাবের সাথে যৌগিকভাবে কাজ করে।     

বহুমুখী সেতুতে অনেক ইউটিলিটি রয়েছে যার মধ্যে একটি গ্যাস পাইপলাইন, টেলিযোগাযোগ এবং একটি উচ্চ-ভোল্টেজ পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন রয়েছে। এর পাশাপাশি নিচের ডেকে একটি ট্রেন অববাহিকা সহজতর করার জন্য এটি জরুরি অ্যাক্সেস পয়েন্ট আছে।

ডিজাইনের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ভূতাত্ত্বিক সীমা নির্ধারণে এই স্থানে ভূমিকম্পের ঝুঁকির একটি বিস্তারিত অধ্যয়ন করা হয়েছিল। ভূতাত্ত্বিক বিপদের দুটি মাত্রার উপরে স্টাডি করা  হয়েছিল  :
·       অপারেটিং লেভেল ভুমিকম্প  এবং
·       আকস্মিক পর্যায়ের ভূমিকম্প  
অপারেটিং লেভেল ভূমিকম্পটি 100 বছর সময় পর পর ফিরে আসে যা সেতুর জীবন কাল সময়ের মধ্যে 65 শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আকস্মিক ভূমিকম্পটি  ৪৭৫ বছর পর পর ফিরে আসে যা এই সেতুর জীবন কালের সময় অতিবাহিত করার সময় 20 শতাংশে সম্ভাবনা রয়েছে। ভুমিকম্পের ফলে সেতুতে যদি কোন ক্ষয় ক্ষতি হয় তা সহজেই সনাক্ত যোগ্য ও কোন মেম্বারের প্রতিস্থাপন ছাড়াই মেরামত করতে সক্ষম হবে।

এর পরবর্তীতে AECON আরও ২ ধরনের পাইলে বিস্তারিত এনালাইসিস ও ইনভেস্টিগেশন করেছিল সর্বোচ্চ অনুকূল ফাউনডেশন ডিজাইন এর জন্য।
·       বৃহৎ ব্যাসের (৩ মিটার বা ১০ ফিট ) স্টিল টিউব্লার পাইল
·       বৃহৎ ব্যাসের কাস্ট-ইন-সিটু কংক্রিট বোর পাইল

এই ধরনের স্টাডি হওয়ার ফলে জানা যায় স্টিল টিউব পাইল ভুমিকম্পের তরঙ্গের ফলে উৎপন্ন পার্শ্ব বল (লেটারাল লোড ) এর প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকরী। স্টিল পাইপের ক্ষেত্রে এই ধরনের বল প্রতিরোধ করা হয় স্টিল পাইপের এক্সিয়াল লোড হিসাবে। যেখানে কংক্রিট বোর পাইলের ক্ষেত্রে এই ধরনের লোড প্রতিরোধ করা হয় ফ্লেক্সারাল ক্ষমতা দ্বারা। এখানে অনেক বড় আকারের বেন্ডিং মোমেন্ট উৎপন্ন হয় সিসমিক লোডের কারনে যা রেইনফরসমেন্টের একার পক্ষে প্রতিরোধ করতে হত । অন্য দিকে স্থায়ী স্টিল আবরণ যথাযত ভাবে কার্যকর করতে মাটির অন্তত ৩ মিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত স্থাপন করতে হত।  কিন্তু ব্রিজের কার্যকারী ১০০ বছর জীবন কালীন  সময়ে নদীর তলদেশ ক্ষয়ের ফলে গভীরতা আরও বাড়াতে থাকার সম্ভাবনা ছিল ।  সব কিছু বিবেচনা করে দেখা গিয়েছে যে এই রকম ভাবে ডিজাইন করে ৩ মিটার ব্যাসের কংক্রিট পাইল ১৫ টারও বেশি দিতে হবে এর পরিপেক্ষিতে ৮ টি স্টিল পাইল দিলেই চলবে। একটা জিনিস আমরা জানি যে পাইলের সংখ্যা যত বেশি বাড়বে পাইল ক্যাপের আকার ও ওজনও তত বেশি বাড়বে। এই সকল ফ্যাক্টর খরচ ও ফাউন্ডেশনের ক্ষমতার উপরে খারাপ প্রভাব ফেলে। তারপরে সব কিছু বিবেচনা করে সমাধান হিসাবে গোলাকার আগাগোড়া স্টিল টিউব্লার পাইল বা কম্পজিট পাইল যার বাইরের দিকে স্টিল টিউব থাকবে আর ভিতরে রেইনফোরসড কংক্রিট থাকবে এমনটা  সুপারিশ করা হয়েছিল।  

কংক্রিট ও স্টিলের কম্পজিট পাইল যা লেটারাল লোডের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী

এই ব্রিজের আচরন একটু জটিল হবে কারন এর উচ্চতার কারনে। যদি মাটির ক্ষয় বিবেচনা করা হয় তাহলে এই উচ্চতা ১২০ মিটার হয়। এর উপরে থাকবে বিশাল ওজনের সুপার স্ট্রাকচার, পাইল ক্যাপ ও পাইল। এই জন্য থ্রি ডাইমেনশনাল নন লিনিয়ার টাইম হিস্টোরি ডাইনামিক এনালাইসিস করতে মডিফাইড পেনজিয়েন মডেল ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছিল । স্ট্রাকচার এবং মুক্ত ফিল্ড সয়েল । এই স্ট্রক চার ও মুক্ত ফিল্ড সয়েল এর মাঝে ইন্টারেকশনের মাধ্যমে কৃত্তিম ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। এর পরবর্তীতে সমতুল্য শিয়ার মডিউলাস এবং প্রত্যেক লেয়ারের মাটির মধ্যকার কার্যকারী ডাম্পিং রেশিও নির্ণয় করতে  “ফ্রি ফিল্ড এনালাইসিস”  ব্যবহার করা হয়েছিল । “ফ্রি ফিল্ড এনালাইসিস” করতে কম্পিউটারে “ শেক এনালাইসিস প্রোগ্রাম” ব্যবহার করা হয়েছিল। এর পরবর্তীতে থ্রি ডাইমেনশনাল নন লিনিয়ার টাইম হিস্টোরি ডাইনামিক এনালাইসিস করতে সমতুল্য শিয়ার মডিউলাস ও ডাম্পিং রেশিও এর প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল।


 
                             একটি স্ট্রাকচার – ফ্রি ফিল্ড সয়েল মডেল 

ভুমিকম্পের  অবস্থা নকল করতে মডেলে “ গ্রাউন্ড মোশন” প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং লোড ক্রম অনুসারে পাইলে এবং সাব  স্ট্রাকচারে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি অন্যন্য লোড কম্বিনেশন যেমন বাতাস, শিপ ইমপ্যাক্ট ইত্যাদিও প্রয়োগ করা হয়েছিল যেগুলো অবশ্য সঙ্কট পূর্ণ  ( ক্রিটিকাল ) হতে  দেখা যায় নি। তাই সিসমিক লোড কম্বিনেশনটাই ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল।   

এর পরবর্তীতে আরেকটি বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ব্রিজ নিয়ে। সম্পূর্ণ ব্রিজ কে ৬ স্পানের মডেলে ভাগ করা হয়েছিল বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য যার প্রত্যেক স্পানের দৈঘ্যে ছিল লম্বায় ১৫০ মিটার। তারপরে প্রত্যেক পায়ার কে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষয়ক্রীত এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ মডেলে বিভিন্ন কম্বিনেশন প্রয়োগ করে নির্ণয় হয়েছিল প্রত্যেকটি পায়ারের ফাউন্ডেশনের ক্রিটিকাল এক্সিয়াল, শিয়ার এবং বেন্ডিং লোড সমূহ।   

৬ স্পান থ্রি ডাইমেনশনাল গ্লোবাল মডেল





প্রাথমিক স্টাডি করার সময় ধরা হয়েছিল ব্রিজের ডেককে সাপোর্ট হিসাবে  প্রথাগত স্লাইডিং বিয়ারিং। যেহেতু এখানে সিসমিক লোড  আসার সম্ভাবনা ছিল তাই এখানে ফিক্সড সাপোর্ট এড়ানোর চেষ্টা  ছিল। এক্ষেত্রে “ শক ট্রান্স মিশন ইউনিট” প্রস্তাব করা হয়েছিল  যাতে যথাযত ভাবে লোড ট্রান্স মিশন হতে পারে। কিন্তু এই সিস্টেমে যে লোড পায়ারের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছিল তা অনেক বড় আকারের ছিল। এর ধারাবাহিকতায় AECOM নতুন ধরনের সমাধান ব্যবহার করেছিল।

 ভূমিকম্প রোধী ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আসল কৌশল ছিল পায়ারের নিচে অবস্থিত প্লাস্টিক হিঞ্জের মাধ্যমে সিসমিক এনার্জি ছড়িয়ে দেওয়া। পরবর্তীতে সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং সুবিধা নির্ণয় করা হয়েছিল যা সম্পূর্ণ স্ট্রাকচারকে কোন রকম ডেমেজ ছাড়া  ইলাস্টিকালি আচরন করতে সাহায্য করে । এই সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং পাইলের সংখ্যা, পাইল ক্যাপের আকার, এবং স্টিল সুপার স্ট্রাকচারের আকার কমাতে সাহায্য করেছে । যার ফলে কার্যকরী খরচের একটা  ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে। সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং সারা বিশ্বে   ব্যবহার করা হয় যাতে সিস মিক লোড সহনীয় করা যায়। এই কৌশলে সকল প্রাথমিক স্ট্রাকচার মেম্বার কোন রকম ডেমেজ ছাড়া স্থিতিস্থাপক হিসাবেই থাকে। 






                         পদ্মা সেতুর সিসমিক আইসোলেশনের মুলনীতি  


এই সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং এ তিনটি প্রধান উপাদান থাকে।
·       একটি অংশ সার্ভিস লোডে এবং সার্ভিস লোডের কারনে লেটারাল ফ্লেকজিবিলিটি এর বিপরিতে অনমনীয়তা প্রদান করে
·       একটি অংশ কাঠামোকে সেলফ সেন্টারিং প্রদান করতে সাহায্য করে
·       একটি অংশ এনার্জি ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে।
বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে প্রচলিত পট বিয়ারিং এর চেয়ে সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং এর মাধ্যমে সিস মিক লোড অনেক কমিয়ে ফেলা যায় । ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং পেন্ডুলামের মত আচরন করে কিন্তু আইসোলেশন অংশ তার স্বাভাবিক স্বভাব এর কারনে স্বাভাবিক সময় লাগে যার কারনে ভূমিকম্প জনিত লোড কমিয়ে ফেলে। ডাম্পিং ইফেক্ট স্লাইডিং মেকানিজমের কারনে ভুমিকম্পের প্রতিক্রিয়া উপশম করে। ভুমিকম্পের কারনে স্থানচ্যুতি ঘটে  প্রাথমিক ভাবে   বিয়ারিং প্লেটে । এর পরে মুল স্টাক চারে লেটারাল লোড এবং স্থানচ্যুতি  সরবারাহ অনেক খানি কমে যায়।

এই সিস মিক লোডের কমে যাওয়ার কারনে ব্রিজের পাইয়ারের সর্ব উপরে পাইল লোড অনেক খানি কমে যায়। এই প্রথাগত বিয়ারিং পদ্ধতি ও ধাক্কা সরবরাহ ইউনিট থাকার কারনে প্রত্যেক ব্রিজ পায়ারে ৮ টি করে স্টিল ও কঙ্ক্রিটের কম্পোজিট  পাইলের প্রয়োজন হবে। এর পাশা পাশি সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং ব্যবহারের কারনে পাইলের সংখ্যা কমে ৬ এ দাঁড়াবে। যা ফাউন্ডেশনের খরচ ২০% কমিয়ে ফেলে ।
পরবর্তীতে AECON সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং অন্তর্ভুক্তি করে ডিজাইন ডেভেলপড করে। সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং এর প্রভাবে শুধুমাত্র সাব স্ট্রাক চারে সীমাবদ্ধ থাকে নি । এটি সুপার স্ট্রাক চারের ট্রাসের মেম্বারের সাইজ কমাতেও সাহায্য করেছিল। এর ফলে সম্পূর্ণ ব্রিজের স্টিলের কাজ  ৬% কমাতে সাহায্য করেছিল।



( This article is adopted form the below link article which title is: Design for Severe Earthquake and Deep Riverbed Scour )

Author
ডঃ রবিন শ্যাম
Ph.D., Civil Engineer, FICE,
Global long span and specialty Bridges Director of AECOM
 মুল লেখা ঃ এখানে ক্লিক করুন 


আমার সম্মন্ধে জানতে ও আমাকে Facebook এ Follow করতে ঃ এখানে ক্লিক করুন 

রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশি কাঠের একক ওজন সমূহ


বাংলাদেশি কাঠের একক ওজন সমূহ

নির্মাণ সামগ্রি হিসাবে কাঠের ভুমিকা অনেক আগে থেকে। বিভিন্ন কাঠের মান বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কাঠের ঘনত্তের ভিত্তিতে কাঠের একক ওজন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশি কাঠের একক ওজন নিয়ে আমাদের প্রায়ই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় । তাই আমাদের সবার জন্য কাঠের একক ওজনের এই তালিকা 



শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং দুর্ঘটনাগুলো

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং দুর্ঘটনাগুলো 

বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কিছু বড় বড় দুর্ঘটনা রয়েছে । এদের মধ্যে যে সব দুর্ঘটনা বিল্ডিং ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটির কারনে হয়েছিল আজকে আমারা তা নিয়ে আলোচনা করব।




01.  Spectrum sweater industries Ltd. Building collapse

Spectrum sweater industries Ltd. Building collapse

১১ এপ্রিল ২০০৫ সালে ঢাকার সাভার শিল্প নগরির নবীনগর- কালিয়াকোর সড়কের বাইপাইল নামক স্থাপনে Spectrum sweater industries Ltd. নামের একটি ৯ তালা বিশিষ্ট পোশাক কারখানা সম্পূর্ণ ভাবে ধসে পরে। এই দুর্ঘটনা যখন ঘটে তখন রাত্রের শিফটে শ্রমিকরা কাজ করছিল। এ ভবন ধসে পড়ার কারন নিয়ে বেশ মতবিরোধ রয়েছে। এই পোশাক কারখানা রাজউকের অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজউকের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছিলেন এটি কোনভাবেই সঠিক ভাবে ডিজাইন ও নির্মাণ করা হয় নি। এই বিল্ডিং এর নির্মাণ সামগ্রি ও কাঠামো কোনভাবেই নয় তালা বিল্ডিং এর মত ছিল না। এছাড়াও এই বিল্ডিং সাইটের মাটির ধরন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয়নি। বিল্ডিং যখন নিচে পরে যাওয়া শুরু করেছিল তখন উপরের তালার পাওয়ার কাট হয়ে গিয়ে এই পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এর ক্ষয় ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছিল ও ৩৫০ জন নিখোঁজ হয়েছিল এবং পরে অনেকে উদ্ধার হয়েছিল ।



02. Phoenix textile building collapse

Phoenix textile building collapse

২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহাখালীতে Phoenix textile building নামের একটি ৪ তালা বিশিষ্ট বিল্ডিং ধসে পড়ে। রাজউক থেকে জানা যায় এই বিল্ডিং ধসের ২৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন রাজউক থেকে তিন তালার বেশি অনুমোদন দেওয়া হত না। পরে এই বিল্ডিং এ নতুন করে ফ্লোর নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া এটি তখন আবাসিক ভবন হিসাবে নির্মাণ করা হয় এবং পরবর্তীতে যা পোশাক কারখানা হিসাবে ব্যবহার করা হত। এই অপরিকল্পিত সংস্কার এই বিল্ডিং ধসের অন্যতম কারন হিসাবে ধরা হয়। কারন বিল্ডিং যখন ধসে পড়ে তখন দেখা যায় চারতালা ভবনটি ধসে তার মুল উচ্চতার অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ভবনের বেশির ভাগ অংশেই কলাম অর্ধেক ভেঙ্গে গিয়েছিল।
এছাড়া এর ফাউন্ডেশনেও ত্রুটি ছিল । ভবন ধসে যাওয়ার পরে এর মাঝের দিকে গর্তের মত হয়ে গিয়েছিল । এছাড়াও ভবনটি রাজধানীর ব্যস্ত তম রাস্তার পাশে অবস্থিত ছিল। যার কারনে রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহনের চলাচলের কম্পনের ফলে এটির ধসে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারনা করা হয়। সার্বিক ভাবে ভবনটি অদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ডিজাইন ও তত্ত্বাবধান করা হয়েছিল যার ফলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুরঘটনায় ৬২ জন শ্রমিক প্রান হারান এবং অনেক মানুষ নিখোঁজ হন ।    


03. Rana Plaza Collapse





সামনের দিক 



পিছনের দিক 



২৪ এপ্রিল ২০১৩ । বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিল্ডিং দুর্ঘটনা ঘটে এই কলঙ্কিত দিনে। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ১১৩০ জন নিহত , ২৫০০ জনের বেশি আহত এবং ১০০০ জনের মত নিখোঁজ হয়।  

ঢাকার অদুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে আগেরদিন ভবনটিতে ফাটল ধরার খবর ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরেই ভবনটি ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ভবনটির নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু ভবন মালিক বোঝান সামান্য একটু প্লাস্টার খুলে পড়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।
পরের দিন  সকাল ৯টায় ৯ তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ভবনের প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান। আর চতুর্থ তলা থেকে ৭তম তলা পর্যন্ত গার্মেন্টস।  ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির ৬টি তলা পুরোপুরি মাটির নিচে চলে যায়।
ধসের আগে ও পরে 


সাভার বাজারের মূল সড়কের পূর্বদিকে রাস্তা লাগোয়া প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির অবস্থান ছিল।  অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করায় ধসে পড়ে রানা প্লাজা। ৬ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ৯ তলা তৈরি করা ছিল ভবন ধসের অন্যতম ৬ তলার জায়গায় ৯ তলা করায় অতিরিক্ত ওজনে ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির ৬ তলা পর্যন্ত মাটির নিচে দেবে যায়।  ভবনে নিম্নমানের ইট সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করা হয়েছিল
যে জায়গায় ভবনটি তৈরি করা হয়েছে সেটি এক সময় অন্তত ২ শ’ ফুট গভীর ডোবা ছিল। ডোবা ভরাট করা হয়েছে স মিলের কাঠের গুঁড়ো, ভুসি, ছাই, ধানের তুষ ও মাটি আর বালি দিয়ে। এরমধ্যে কাঠের গুঁড়ো, ভুসি আর ছাইয়ের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। ভরাটের সময় ডোবায় পানিও ছিল। এজন্য ডোবার মাটি ছিল ভেজা। ভরাটের ক্ষেত্রে মাটি আর বালির চেয়ে ছাই আর ভুসি বেশি দেয়ায় ভবনের ভিত ছিল খুবই হালকা। ভবনটির বয়স সব মিলিয়ে অন্তত ১০ বছর। ভবনটির ৬ থেকে ৯তলা পর্যন্ত করা হয়েছিল ভবন ধসের তিন বছর আগে । দীর্ঘ সময়ে ভবনের নিচে থাকা ছাই, ভূসি আর কাঠের গুঁড়ো ভেজা মাটির কারণে দেয়াল ফাঁপা ধরে যায়। ফাপার কারণে ওজনের ফলে ভবনে ফাটল ধরে।
ভবনটিতে প্রত্যেক ফ্লোরে জেনারেটর ছিল ।  বিদ্যুত উৎপাদনের জেনারেটর চালু হলে হঠাৎই ওজন ধরে রাখতে না পেরে ভবনটি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। ছ’তলা পর্যন্ত মাটিতে দেবে যায়। ভবন মালিক প্রভাব খাটিয়ে ৬ তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ৯ তলা ভবন করেন। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা মানা হয়নি। সাভার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভবন তৈরির অনুমোদন দেয়। ভবনের ছাদে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার ছিল। স্টিল ফ্রেমের টাওয়ারটি অন্তত ২ শ’ ফুট উঁচু। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ভবনে প্রায় ১০ হাজার লোকের নিত্য আনাগোনা ছিল রানা প্লাজাতে । ভবন ধসে পড়ার অন্যতম কারণ শিল্প পুলিশের নিষেধ না মানা। শিল্প পুলিশ ভবনটিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভবন মালিক তা শোনেননি। 





আমার সম্বন্ধে জানতে উপরে About me , Academic , Co-curriculum  এ Click করুন আমাকে  Social Media তে Follow করতে হলে নিচের লিংক এ Click করুন ঃ


 Facebook Profile : Click here