এই ব্লগটি সন্ধান করুন

Mozammel Hoque Momin

Mozammel Hoque Momin

শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং দুর্ঘটনাগুলো

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং দুর্ঘটনাগুলো 

বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কিছু বড় বড় দুর্ঘটনা রয়েছে । এদের মধ্যে যে সব দুর্ঘটনা বিল্ডিং ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটির কারনে হয়েছিল আজকে আমারা তা নিয়ে আলোচনা করব।




01.  Spectrum sweater industries Ltd. Building collapse

Spectrum sweater industries Ltd. Building collapse

১১ এপ্রিল ২০০৫ সালে ঢাকার সাভার শিল্প নগরির নবীনগর- কালিয়াকোর সড়কের বাইপাইল নামক স্থাপনে Spectrum sweater industries Ltd. নামের একটি ৯ তালা বিশিষ্ট পোশাক কারখানা সম্পূর্ণ ভাবে ধসে পরে। এই দুর্ঘটনা যখন ঘটে তখন রাত্রের শিফটে শ্রমিকরা কাজ করছিল। এ ভবন ধসে পড়ার কারন নিয়ে বেশ মতবিরোধ রয়েছে। এই পোশাক কারখানা রাজউকের অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজউকের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছিলেন এটি কোনভাবেই সঠিক ভাবে ডিজাইন ও নির্মাণ করা হয় নি। এই বিল্ডিং এর নির্মাণ সামগ্রি ও কাঠামো কোনভাবেই নয় তালা বিল্ডিং এর মত ছিল না। এছাড়াও এই বিল্ডিং সাইটের মাটির ধরন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয়নি। বিল্ডিং যখন নিচে পরে যাওয়া শুরু করেছিল তখন উপরের তালার পাওয়ার কাট হয়ে গিয়ে এই পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এর ক্ষয় ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছিল ও ৩৫০ জন নিখোঁজ হয়েছিল এবং পরে অনেকে উদ্ধার হয়েছিল ।



02. Phoenix textile building collapse

Phoenix textile building collapse

২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহাখালীতে Phoenix textile building নামের একটি ৪ তালা বিশিষ্ট বিল্ডিং ধসে পড়ে। রাজউক থেকে জানা যায় এই বিল্ডিং ধসের ২৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন রাজউক থেকে তিন তালার বেশি অনুমোদন দেওয়া হত না। পরে এই বিল্ডিং এ নতুন করে ফ্লোর নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া এটি তখন আবাসিক ভবন হিসাবে নির্মাণ করা হয় এবং পরবর্তীতে যা পোশাক কারখানা হিসাবে ব্যবহার করা হত। এই অপরিকল্পিত সংস্কার এই বিল্ডিং ধসের অন্যতম কারন হিসাবে ধরা হয়। কারন বিল্ডিং যখন ধসে পড়ে তখন দেখা যায় চারতালা ভবনটি ধসে তার মুল উচ্চতার অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ভবনের বেশির ভাগ অংশেই কলাম অর্ধেক ভেঙ্গে গিয়েছিল।
এছাড়া এর ফাউন্ডেশনেও ত্রুটি ছিল । ভবন ধসে যাওয়ার পরে এর মাঝের দিকে গর্তের মত হয়ে গিয়েছিল । এছাড়াও ভবনটি রাজধানীর ব্যস্ত তম রাস্তার পাশে অবস্থিত ছিল। যার কারনে রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহনের চলাচলের কম্পনের ফলে এটির ধসে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারনা করা হয়। সার্বিক ভাবে ভবনটি অদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ডিজাইন ও তত্ত্বাবধান করা হয়েছিল যার ফলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুরঘটনায় ৬২ জন শ্রমিক প্রান হারান এবং অনেক মানুষ নিখোঁজ হন ।    


03. Rana Plaza Collapse





সামনের দিক 



পিছনের দিক 



২৪ এপ্রিল ২০১৩ । বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিল্ডিং দুর্ঘটনা ঘটে এই কলঙ্কিত দিনে। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ১১৩০ জন নিহত , ২৫০০ জনের বেশি আহত এবং ১০০০ জনের মত নিখোঁজ হয়।  

ঢাকার অদুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে আগেরদিন ভবনটিতে ফাটল ধরার খবর ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরেই ভবনটি ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ভবনটির নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু ভবন মালিক বোঝান সামান্য একটু প্লাস্টার খুলে পড়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।
পরের দিন  সকাল ৯টায় ৯ তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ভবনের প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান। আর চতুর্থ তলা থেকে ৭তম তলা পর্যন্ত গার্মেন্টস।  ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির ৬টি তলা পুরোপুরি মাটির নিচে চলে যায়।
ধসের আগে ও পরে 


সাভার বাজারের মূল সড়কের পূর্বদিকে রাস্তা লাগোয়া প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির অবস্থান ছিল।  অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করায় ধসে পড়ে রানা প্লাজা। ৬ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ৯ তলা তৈরি করা ছিল ভবন ধসের অন্যতম ৬ তলার জায়গায় ৯ তলা করায় অতিরিক্ত ওজনে ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির ৬ তলা পর্যন্ত মাটির নিচে দেবে যায়।  ভবনে নিম্নমানের ইট সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করা হয়েছিল
যে জায়গায় ভবনটি তৈরি করা হয়েছে সেটি এক সময় অন্তত ২ শ’ ফুট গভীর ডোবা ছিল। ডোবা ভরাট করা হয়েছে স মিলের কাঠের গুঁড়ো, ভুসি, ছাই, ধানের তুষ ও মাটি আর বালি দিয়ে। এরমধ্যে কাঠের গুঁড়ো, ভুসি আর ছাইয়ের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। ভরাটের সময় ডোবায় পানিও ছিল। এজন্য ডোবার মাটি ছিল ভেজা। ভরাটের ক্ষেত্রে মাটি আর বালির চেয়ে ছাই আর ভুসি বেশি দেয়ায় ভবনের ভিত ছিল খুবই হালকা। ভবনটির বয়স সব মিলিয়ে অন্তত ১০ বছর। ভবনটির ৬ থেকে ৯তলা পর্যন্ত করা হয়েছিল ভবন ধসের তিন বছর আগে । দীর্ঘ সময়ে ভবনের নিচে থাকা ছাই, ভূসি আর কাঠের গুঁড়ো ভেজা মাটির কারণে দেয়াল ফাঁপা ধরে যায়। ফাপার কারণে ওজনের ফলে ভবনে ফাটল ধরে।
ভবনটিতে প্রত্যেক ফ্লোরে জেনারেটর ছিল ।  বিদ্যুত উৎপাদনের জেনারেটর চালু হলে হঠাৎই ওজন ধরে রাখতে না পেরে ভবনটি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। ছ’তলা পর্যন্ত মাটিতে দেবে যায়। ভবন মালিক প্রভাব খাটিয়ে ৬ তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ৯ তলা ভবন করেন। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা মানা হয়নি। সাভার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভবন তৈরির অনুমোদন দেয়। ভবনের ছাদে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার ছিল। স্টিল ফ্রেমের টাওয়ারটি অন্তত ২ শ’ ফুট উঁচু। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ভবনে প্রায় ১০ হাজার লোকের নিত্য আনাগোনা ছিল রানা প্লাজাতে । ভবন ধসে পড়ার অন্যতম কারণ শিল্প পুলিশের নিষেধ না মানা। শিল্প পুলিশ ভবনটিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভবন মালিক তা শোনেননি। 





আমার সম্বন্ধে জানতে উপরে About me , Academic , Co-curriculum  এ Click করুন আমাকে  Social Media তে Follow করতে হলে নিচের লিংক এ Click করুন ঃ


 Facebook Profile : Click here



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন